ঢাকা ০৮:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে বিষাক্ত রাসেল ভাইপার

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৭:৩১:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জুন ২০২৪ ৫৮ বার পড়া হয়েছে

বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে বিষাক্ত রাসেল ভাইপার

আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বিষাক্ত রাসেল ভাইপার সাপ একসময় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল প্রায়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেশব্যাপী যেন বেড়েই চলছে বিষাক্ত রাসেল ভাইপারের ছোবল। বাংলাদেশের বরিশাল, পটুয়াখালী, চাঁদপুর এমনকি ঢাকায়ও মিলছে রাসেল ভাইপারের দেখা। এছাড়া ক্রমশ বেড়েই চলেছে বাংলাদেশের অন্যান্য জেলা গুলোতে এর পরিমান। শুধুমাত্র চলতি বছরেই বিগত ৬ মাসে সারা দেশে অন্তত ১১ জন মারা গিয়েছে এই সাপের কামড়ে।

রাসেল ভাইপার দেখতে অনেকটা অজগরের বাচ্চার মত। এটি সাধারণত ৩ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। দৈহিক বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি খুব সহজেই ধান ক্ষেত, ঝোপঝাড় কিংবা শুকনো পাতার মধ্যেও লুকিয়ে থাকতে পারে।

রাসেল ভাইপার সাপকে অনেক এলাকায় চন্দ্রবোড়া বা উলুবড়া নামেও ডাকা হয়।

অন্যান্য সাপ মানুষ দেখলে এড়িয়ে চলে কিংবা পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু মানুষকে বিপদজনক মনে করে রাসেল ভাইপার উল্টো মানুষের পেছনে লাগে। ১ সেকেন্ডের ১৬ ভাগের ১ ভাগ সময়ে এটি আক্রমণ করে ঢেলে দিতে পারে মৃত্যুর কোলে। আর খেপে গেলে বাসাবাড়ির রান্নার প্রেসার কুকারের মত শব্দ করে।

রাসেল ভাইপারের বিষ অত্যন্ত বিষাক্ত। ছোবলের ৫ মিনিটের মধ্যে ক্ষতস্থান ফুলে যায় এবং এর বিষ নষ্ট করে দিতে পারে কিডনি, ফুসফুসহ অন্যান্য অঙ্গ পতঙ্গ।

একটি স্ত্রী রাসেল ভাইপার সাধারণত ২০ থেকে ৪০ টি বাচ্চা দেয়। এমনকি একসাথে ৮০ টি বাচ্চা দেয়ার রেকর্ডও রয়েছে রাসেল ভাইপারের। আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে ইদুর, ব্যাঙ ইত্যাদি পর্যাপ্ত খাবারের উপস্থিত থাকায় বাড়ছে রাসেল ভাইপারের সংখ্যা।

আরো একটি মজার ব্যাপার হচ্ছে অন্যান্য সাপ যেরকম ডিমের মাধ্যমে বাচ্চা দেয় রাসেল ভাইপার সেরকম নয়। রাসেল ভাইপার সরাসরি বাচ্চা প্রসব করেন।

বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে বিষাক্ত রাসেল ভাইপার

দেশে এক সময় বিলুপ্ত হয়ে গেলেও বর্তমান সময়ে মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই রাসেল ভাইপার। রাসেল ভাইপারের কামড়ে অধিকাংশ মারা যাওয়া মানুষ কৃষক। যারা মূলত খেতে খামারে কাজ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা ধারনা করছেন এবছর বন্যার মাধ্যমে রাসেল ভাইপার সারা বাংলাদেশের ছড়িয়ে পড়তে পারে। সেই সাথে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

রাসেল ভাইপারের কামড়ে আইসিইউ সাপোর্ট ছাড়া রোগীকে বাঁচানোর কোন উপায় নেই।

একজন মানুষকে মৃত্যুর কোলে ঢেলে দেওয়ার জন্য রাসেল ভাইপারের ৪০ গ্রাম বেশি যথেষ্ট। তবে রাসেল ভাইপার তার প্রতিটি ছোবলে ২৫০ থেকে ২৬০ গ্রাম পর্যন্ত বিষ ঢালতে পারে।

রাসেল ভাইপারের ছোবল দেওয়ার সর্বোচ্চ ১০০ মিনিটের ভিতরে এন্টিভেনম নিতে হবে। তা না হলে জীবন ঝুঁকিতে পড়ে যাবে।

বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আহমেদুল কবির সাংবাদিকদের কে বলেন, এন্টিভেনম বাংলাদেশের উপজেলা পর্যায়ে পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে। আর যে সকল এলাকায় সাপের উপদ্রব বেশি সেই সকল এলাকায় এন্টিভেনম সংরক্ষণ করা আছে।

রাসেল ভাইপার থেকে বাঁচার উপায়?

শিয়াল, গুইসাপ ও বেজি ইত্যাদি প্রাণী গুলো সাধারণত সাপ খেয়ে ফেলে। কিন্তু আমাদের প্রকৃতিতে এই সকল প্রাণী বিলুপ্তপ্রায় হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে রাসেল ভাইপারের মত সাপের সংখ্যা। কারণ প্রকৃতির খাদ্য শৃংখল অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েছে।

যেহেতু ইতিমধ্যে দেশজুড়ে বাড়ছে রাসেল ভাইপার তাই আমাদের চলাচলে সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। বিশেষ করে যারা ক্ষেতে খামারে কাজ করেন তাদের খুবই সাবধানতার সহিত কাজ করতে হবে। সেই সাথে আমাদের বাড়ির আশেপাশের ঝড় গুলো সব সময় পরিষ্কার রাখা উচিত।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে বিষাক্ত রাসেল ভাইপার

আপডেট সময় : ০৭:৩১:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জুন ২০২৪

বিষাক্ত রাসেল ভাইপার সাপ একসময় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল প্রায়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেশব্যাপী যেন বেড়েই চলছে বিষাক্ত রাসেল ভাইপারের ছোবল। বাংলাদেশের বরিশাল, পটুয়াখালী, চাঁদপুর এমনকি ঢাকায়ও মিলছে রাসেল ভাইপারের দেখা। এছাড়া ক্রমশ বেড়েই চলেছে বাংলাদেশের অন্যান্য জেলা গুলোতে এর পরিমান। শুধুমাত্র চলতি বছরেই বিগত ৬ মাসে সারা দেশে অন্তত ১১ জন মারা গিয়েছে এই সাপের কামড়ে।

রাসেল ভাইপার দেখতে অনেকটা অজগরের বাচ্চার মত। এটি সাধারণত ৩ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। দৈহিক বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি খুব সহজেই ধান ক্ষেত, ঝোপঝাড় কিংবা শুকনো পাতার মধ্যেও লুকিয়ে থাকতে পারে।

রাসেল ভাইপার সাপকে অনেক এলাকায় চন্দ্রবোড়া বা উলুবড়া নামেও ডাকা হয়।

অন্যান্য সাপ মানুষ দেখলে এড়িয়ে চলে কিংবা পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু মানুষকে বিপদজনক মনে করে রাসেল ভাইপার উল্টো মানুষের পেছনে লাগে। ১ সেকেন্ডের ১৬ ভাগের ১ ভাগ সময়ে এটি আক্রমণ করে ঢেলে দিতে পারে মৃত্যুর কোলে। আর খেপে গেলে বাসাবাড়ির রান্নার প্রেসার কুকারের মত শব্দ করে।

রাসেল ভাইপারের বিষ অত্যন্ত বিষাক্ত। ছোবলের ৫ মিনিটের মধ্যে ক্ষতস্থান ফুলে যায় এবং এর বিষ নষ্ট করে দিতে পারে কিডনি, ফুসফুসহ অন্যান্য অঙ্গ পতঙ্গ।

একটি স্ত্রী রাসেল ভাইপার সাধারণত ২০ থেকে ৪০ টি বাচ্চা দেয়। এমনকি একসাথে ৮০ টি বাচ্চা দেয়ার রেকর্ডও রয়েছে রাসেল ভাইপারের। আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে ইদুর, ব্যাঙ ইত্যাদি পর্যাপ্ত খাবারের উপস্থিত থাকায় বাড়ছে রাসেল ভাইপারের সংখ্যা।

আরো একটি মজার ব্যাপার হচ্ছে অন্যান্য সাপ যেরকম ডিমের মাধ্যমে বাচ্চা দেয় রাসেল ভাইপার সেরকম নয়। রাসেল ভাইপার সরাসরি বাচ্চা প্রসব করেন।

বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে বিষাক্ত রাসেল ভাইপার

দেশে এক সময় বিলুপ্ত হয়ে গেলেও বর্তমান সময়ে মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই রাসেল ভাইপার। রাসেল ভাইপারের কামড়ে অধিকাংশ মারা যাওয়া মানুষ কৃষক। যারা মূলত খেতে খামারে কাজ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা ধারনা করছেন এবছর বন্যার মাধ্যমে রাসেল ভাইপার সারা বাংলাদেশের ছড়িয়ে পড়তে পারে। সেই সাথে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

রাসেল ভাইপারের কামড়ে আইসিইউ সাপোর্ট ছাড়া রোগীকে বাঁচানোর কোন উপায় নেই।

একজন মানুষকে মৃত্যুর কোলে ঢেলে দেওয়ার জন্য রাসেল ভাইপারের ৪০ গ্রাম বেশি যথেষ্ট। তবে রাসেল ভাইপার তার প্রতিটি ছোবলে ২৫০ থেকে ২৬০ গ্রাম পর্যন্ত বিষ ঢালতে পারে।

রাসেল ভাইপারের ছোবল দেওয়ার সর্বোচ্চ ১০০ মিনিটের ভিতরে এন্টিভেনম নিতে হবে। তা না হলে জীবন ঝুঁকিতে পড়ে যাবে।

বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আহমেদুল কবির সাংবাদিকদের কে বলেন, এন্টিভেনম বাংলাদেশের উপজেলা পর্যায়ে পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে। আর যে সকল এলাকায় সাপের উপদ্রব বেশি সেই সকল এলাকায় এন্টিভেনম সংরক্ষণ করা আছে।

রাসেল ভাইপার থেকে বাঁচার উপায়?

শিয়াল, গুইসাপ ও বেজি ইত্যাদি প্রাণী গুলো সাধারণত সাপ খেয়ে ফেলে। কিন্তু আমাদের প্রকৃতিতে এই সকল প্রাণী বিলুপ্তপ্রায় হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে রাসেল ভাইপারের মত সাপের সংখ্যা। কারণ প্রকৃতির খাদ্য শৃংখল অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েছে।

যেহেতু ইতিমধ্যে দেশজুড়ে বাড়ছে রাসেল ভাইপার তাই আমাদের চলাচলে সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। বিশেষ করে যারা ক্ষেতে খামারে কাজ করেন তাদের খুবই সাবধানতার সহিত কাজ করতে হবে। সেই সাথে আমাদের বাড়ির আশেপাশের ঝড় গুলো সব সময় পরিষ্কার রাখা উচিত।